Press ESC to close

RochonaRochona রচনা পড়িতে তোমাদের স্বাগতম

এডেনিয়াম গাছের যত্ন কিভাবে করবেন ?

এডেনিয়াম, যা মরুভূমির গোলাপ নামেও পরিচিত, তার ব্যতিক্রমী সৌন্দর্য এবং সহজ পরিচর্যার জন্য বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও এই গাছটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করছে।

বন্ধুরা আজকে আমরা আলোচনা করবো এডেনিয়াম গাছের যত্নের ব্যাপারে বিস্তারিত এই সম্পর্কে বিস্তারিত ।

এডেনিয়াম

এডেনিয়াম (Adenium) অ্যাপোসাইনেসি (Apocynaceae) পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এটি মূলত আফ্রিকা ও আরব উপদ্বীপের স্থানীয় গাছ। এর বৈশিষ্ট্য হলো এর স্ফীত কাণ্ড, যা কডেক্স (caudex) নামে পরিচিত। এই কডেক্স গাছটিকে শুষ্ক অঞ্চলে টিকে থাকতে সাহায্য করে। এডেনিয়ামের ফুলগুলো সাধারণত উজ্জ্বল রঙের হয়, যেমন লাল, গোলাপী, সাদা এবং বিভিন্ন মিশ্রণ।

এডেনিয়ামের বিভিন্ন প্রজাতি ও জাত রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু জনপ্রিয় প্রকারভেদ নিচে উল্লেখ করা হলো:

এডেনিয়াম obesum

এটি সবচেয়ে পরিচিত এবং বহুল চাষকৃত প্রজাতি। এর ফুলগুলো উজ্জ্বল গোলাপী বা লাল রঙের হয়।

এডেনিয়াম socotranum

এটি সোকোট্রা দ্বীপের স্থানীয় প্রজাতি এবং এটি আকারে বেশ বড় হয়।

এডেনিয়াম swazicum

এই প্রজাতির গাছ ছোট এবং ঝোপালো হয়। এর ফুলগুলো হালকা গোলাপী রঙের হয়।

এডেনিয়াম arabicum

এই প্রজাতির কডেক্স বেশ বড় এবং গাছের গঠন বেশ আকর্ষণীয়।

টবে এডেনিয়াম

বন্ধুরা টবে এডেনিয়াম চাষ অনেক সহজ । তবে কিছু জিনিস অবশ্যই তোমাকে মাথায় রাখতে হবে। টবে এডেনিয়াম গাছ লাগানোর জন্য প্রথমেই তোমাকে সঠিক উপায়ে মাটি তৈরি করতে হবে। এডেনিয়ামের জন্য ভালো নিষ্কাশনযুক্ত মাটি প্রয়োজন। আপনি বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ৫০ % বেলে দোআঁশ মাটি , ২৫% বালি ও ২৫% কম্পোস্ট ব্যবহার করতে পারো। মাটি তৈরির পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো চারা নির্বাচন। মাটি মিক্স করার সময় ১ চা চামচ ফাঙ্গিসাইড ব্যবহার করতে পারেন।

এডেনিয়াম এর চারা নির্বাচন রোপন : ভালো মানের চারা নির্বাচন করা এডেনিয়াম চাষের প্রথম ধাপ। আপনি বীজ থেকেও চারা তৈরি করতে পারেন, তবে কলমের চারা দ্রুত বাড়ে এবং ফুল দেয়। চারা রোপণের সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে কডেক্সের কিছু অংশ মাটির উপরে থাকে।

আলো : এডেনিয়াম সাধারণত লিথপস এর মতো সূর্য এর আলো পছন্দ করে। দিনে সাধারণত ৬-৭ ঘন্টা সরাসরি সূর্য এর আলোর মধ্যে রাখুন।

পানি দেওয়া : এডেনিয়ামের গোড়ায় অতিরিক্ত জল জমতে দেওয়া উচিত নয়। মাটি শুকিয়ে গেলে পরিমিত পরিমাণে জল দিতে হবে। শীতকালে গাছের বৃদ্ধি কম থাকে, তাই জলের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে।

সার প্রয়োগ : এডেনিয়ামের ভালো বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সার দেওয়া প্রয়োজন। আপনি তরল সার বা দানাদার সার ব্যবহার করতে পারেন। গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার এবং ফুল আসার আগে ফসফরাস ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ সার ব্যবহার করা ভালো।

কাটিং ও প্র্রুনিং : এডেনিয়ামের ডালপালা ছেঁটে দেওয়া প্রয়োজন, যাতে গাছটি সুন্দর আকার ধারণ করে। প্র্রুনিং করলে নতুন ডালপালা গজায় এবং বেশি ফুল ধরে। তবে বর্ষার সময় ডালপালা ছাটাই করা থেকে বিরত থাকুন।

এডেনিয়াম

এডেনিয়াম ফুল কখন ফোটে

বন্ধুরা এডেনিয়াম ফুল সাধারণত বছরে দুইবার ফুল দিয়ে থাকে। সাধারণত বসন্তের শুরুতে এবং গ্রীষ্মের শেষে এডেনিয়াম গাছের ফুল ফুটতে দেখা যায়। অনেকেই বলে থাকেন , যে তার এডেনিয়াম গাছে ফুল ফোটে না। এর প্রধান কারণ হলো গাছের সঠীক পরিচর্যার অভাব। তাই এডেনিয়াম গাছ এর ঠিকমতো যত্ন নিতে হবে। নিচে এডেনিয়াম গাছের যত্নের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

এডেনিয়ামের রোগ ও পোকামাকড়

বন্ধুরা এডেনিয়াম একটি সাধারণ রোগ হলো root rot বা শিকড় পচা । সাধারণত অতিরিক্ত পানি দেওয়ার কারণে এমনটা হতে পারে। এছাড়া ও মিলি বাগ বা এফিড ( ছোট সবুজ বা কালো রঙের পোকা, যা গাছের কচি ডগা ও পাতার রস চুষে খায় ) পোকার আক্রমন হতে পারে। সাধারণত পোকামাকড় এর আক্রমণ হলে গাছে কীটনাশক স্প্রে করতে পারো। অথবা বাসায় নিমের তেল এর তৈরি কীটনাশক ও তৈরি করতে পারো। যা পরিবেশ বান্ধব। এছাড়া আক্রান্ত ঢাল ছাটাই করতে পারেন। তবে গাছের শেকড় পচা রোগ দেখা দিলে শুধু কীটনাশক দিলেই হবে না।

এডেনিয়াম এর শেকড় পচা রোগ

বন্ধুরা এডেনিয়াম গাছের শেকড় পচা রোগ দেখা দিলে , সাথে সাথেই গাছটিকে টব থেকে তুলে ফেলুন। তারপর ধারালো একটি এন্টি কাটার বা ছুড়ি নিয়ে যতটুকু অংশ পচে গেছে ততটুকু অংশ কেটে ফেলে ‍দিন। কাটা অংশে ফাঙ্গিসাইট ( বাজার থেকে কিনতে পারবেন ন্যাচারাল ফাঙ্গিসাইট বললেই দিয়ে দিবে। ) এর পেস্ট তৈরি করে কাটা অংশে লাগিয়ে কয়েক ঘন্টা অথবা একদিন এর জন্য একটি ছায়া ‍যুক্ত স্থানে রেখে দিন।

সবশেষে গাছটিকে একটি ছোট টবে , শুধুমাত্র সিলেকশন বালুর মধ্যে লাগিয়ে ছাড়ায় রেখে দিন। ইনশাআল্লাহ সপ্তাহ খানেক এর মধ্যেই শেকড় গজাতে শুরু করবে। তার সপ্তাহ খানেক পরে তুমি টবে স্থানান্তর করতে পারেন।

এডেনিয়াম গাছের যত্ন

বন্ধুরা চলো এবার জানা যাক , কিভাবে এডেনিয়াম বা ডেজাট রোজ এর যত্ন নেওয়া যায়। এডেনিয়াম গাছ পর্যাপ্ত আলো ভালোবাসে। প্রতিদিন অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা সরাসরি সূর্যের আলো প্রয়োজন। যদি আপনার বাড়িতে পর্যাপ্ত আলো না থাকে, তবে আপনি গ্রো লাইট ব্যবহার করতে পারেন।

বর্ষাকালে এডেনিয়াম গাছের গোড়ায় জল জমতে দেওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে গাছের শিকড় পচে যেতে পারে। তাই গাছটিকে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে উঁচু স্থানে রাখুন বা ছাদের নিচে নিয়ে আসুন।

শীতকালে এডেনিয়াম গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। এই সময় গাছকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে হয়। গাছটিকে ঘরের ভিতরে নিয়ে আসুন বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিন। জলের পরিমাণ কমিয়ে দিন এবং সার দেওয়া বন্ধ রাখুন। বন্ধুরা এডেনিয়অম গাছের যত্নের ব্যাপার আরো কিছু যানার থাকলে তোমরা কমেন্ট এ তোমাদের প্রশ্ন করতে পারো।

এডেনিয়াম গাছের উপকারিতা

এডেনিয়াম শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, এর কিছু উপকারিতাও রয়েছে।

  • এটি বাতাস থেকে দূষিত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।
  • বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং একটি আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরি করে।
  • মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুন : অলকনন্দা গাছের যত্ন

এডেনিয়াম গাছের দাম

এডেনিয়ামের দাম নির্ভর করে এর প্রজাতি, আকার এবং বয়সের উপর। ছোট চারা গাছের দাম সাধারণত ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। কলমের চারা বা বয়স্ক গাছের দাম ১০০০ টাকা বা তার বেশি হতে পারে। এছাড়া ও আপনি ছোট চারা ৫০ টাকা বা তার থেকে ও কম দামে নিতে পারেন বিভিন্ন ফেসবুক পেইজ থেকে । যারা মূলত গাছপালা বিক্রি করে থাকে।

এডেনিয়াম কি বিষাক্ত ?

বন্ধুরা যারা সাধারণ বিভিন্ন পোষা প্রানি পালন করে করে থাকেন অথবা বাসায় ছোট্ট বাচ্চা রয়েছে । তারা প্রায় সময়ই প্রশ্ন করে থাকেন যে , এডেনিয়াম কি বিষাক্ত ? উত্তর হলো হ্যাঁ । সাধারণত এর সমস্ত অংশ মানুষ ও প্রানির জন্য বিষাক্ত। এতে cardiac glycosides রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। যা আমাদের হৃদপৃন্ডের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আফ্রিকার অনেক উপজাতিরা এই গাছের রস দিয়ে বিষাক্ত তীর তৈরি করে থাকে।

শেষ কথা

আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি আপনাকে এডেনিয়াম চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সাহায্য করেছে। আপনার যদি আরও কিছু জানার থাকে, তবে নির্দ্বিধায় জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আপনার বাগান হোক সবুজে শ্যামল, ফুলে ভরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *