
আপনার কি ওয়েবসাইট আছে? অথবা, ওয়েবসাইট বানানোর কথা ভাবছেন? তাহলে “হোস্টিং” শব্দটা নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন। কিন্তু এই হোস্টিং জিনিসটা আসলে কী, কেন এটা দরকার, আর আপনার ওয়েবসাইটের জন্য সঠিক হোস্টিং কীভাবে বাছবেন – এই সব প্রশ্নের উত্তর আজ আমরা খুঁজে বের করব।
হোস্টিং কি?
হোস্টিং অনেকটা আপনার ওয়েবসাইটের জন্য অনলাইনে জায়গা ভাড়া নেওয়ার মতো। আপনার দোকান বা অফিসের জন্য যেমন একটি ঠিকানা দরকার, তেমনই ইন্টারনেটে আপনার ওয়েবসাইটকে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি “হোস্টিং”-এর প্রয়োজন। আরও সহজ করে বললে, আপনার ওয়েবসাইটের ছবি, লেখা, ভিডিওসহ যাবতীয় ডেটা যেখানে জমা থাকে, সেটাই হলো হোস্টিং। যখন কেউ আপনার ওয়েবসাইটের নাম লিখে সার্চ করে, তখন এই হোস্টিং থেকেই সেই তথ্যগুলো ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে যায়।
হোস্টিং কেন প্রয়োজন?
এখন প্রশ্ন হলো, কেন এই হোস্টিং দরকার? আপনার কম্পিউটারে তো সবকিছু store করে রাখতে পারেন, তাহলে হোস্টিং-এর কী প্রয়োজন? কারণ আপনার কম্পিউটার সবসময় ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত নাও থাকতে পারে। কিন্তু হোস্টিং হলো এমন একটি সার্ভার যা সবসময় ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড থাকে। তাই, আপনার ওয়েবসাইটকে ২৪/৭ (24/7) চালু রাখতে হোস্টিং-এর বিকল্প নেই।
হোস্টিং এর প্রয়োজনীয়তাগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ওয়েবসাইটকে অনলাইনে সকলের জন্য সহজলভ্য করে তোলে।
- ওয়েবসাইটের ডেটা নিরাপদে রাখে।
- ওয়েবসাইটের গতি (speed) বাড়াতে সাহায্য করে।
- ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ তৈরি করে, যাতে ডেটা হারানোর ভয় না থাকে।
বন্ধুরা এছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে যার জন্য তোমাকে অবশ্যই তোমার ওয়েবসাইটরের জন্য হোস্টিং প্রয়োজন।
হোস্টিং কত প্রকার?
বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইটের জন্য বিভিন্ন রকমের হোস্টিং সার্ভিস রয়েছে। আপনার ওয়েবসাইটের প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি সেই সার্ভিস বেছে নিতে পারেন। চলুন, কয়েকটি প্রধান হোস্টিং সার্ভিস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
শেয়ার্ড হোস্টিং (Shared Hosting)
শেয়ার্ড হোস্টিং হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সাশ্রয়ী হোস্টিং অপশন। এখানে, একটি সার্ভার অনেকগুলো ওয়েবসাইটের সাথে শেয়ার করা হয়। একটি ক্লাস রুমের কথা চিন্তা করতে পারেন, যেখানে একই ক্লাস রুমে ৫০ বা তারও বেশি শিক্ষার্থী একই রুমে ক্লাস করে । ছোট এবং মাঝারি ওয়েবসাইটের জন্য এটা বেশ ভালো।
শেয়ার্ড হোস্টিং এর সুবিধা :
- দাম কম ।
- ব্যবহার করা সহজ ।
- ছোট ও কম ভিজিটর সম্পূর্ণ ওয়েবসাইটের জন্য উপযোগী।
তবে তোমার সাইটে যদি ভিজিটর বেশি হয়ে থাকে এবং বেশি রিসোর্স থাকে তবে শেয়ার্ড হোস্টিং খুব একটা ভালো হবে না তোমার জন্য।
ভিপিএস হোস্টিং (VPS Hosting)
বন্ধুরা ভিপিএস (ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার) হোস্টিং হলো শেয়ার্ড হোস্টিং থেকে একটু আলাদা। এখানেও সার্ভার শেয়ার করা হয়, তবে প্রত্যেক ওয়েবসাইটের জন্য আলাদা ভার্চুয়াল স্পেস তৈরি করে দেওয়া হয়। অনেকটা হোস্টেলের মতো, তবে এখানে প্রত্যেকের জন্য আলাদা কেবিন থাকে। যাদের ওয়েবসাইটে বেশি ট্র্যাফিক (visitor) আসে, তাদের জন্য ভিপিএস হোস্টিং ভালো।
ভিপিএস হোস্টিং এর সুবিধা :
- বেশি কন্ট্রোল (control) করা যায়।
- ওয়েবসাইটের স্পিড ভালো থাকে।
- শেয়ার্ড হোস্টিং থেকে বেশি নিরাপদ।
ডেডিকেটেড সার্ভার (Dedicated Server)
ডেডিকেটেড সার্ভার হলো সবচেয়ে শক্তিশালী হোস্টিং অপশন। এখানে পুরো সার্ভারটি একটি মাত্র ওয়েবসাইটের জন্য কাজ করে থাকে। অনেকটা নিজের বাড়ির মতো, যেখানে সবকিছু আপনার নিজের। যাদের অনেক বড় ওয়েবসাইট এবং প্রচুর ট্র্যাফিক, তাদের জন্য ডেডিকেটেড সার্ভার সেরা।
ডেডিকেটেড সার্ভার হোস্টিং এর সুবিধা:
- সবচেয়ে বেশি কন্ট্রোল এবং কাস্টমাইজেশন (customization) করা যায়।
- ওয়েবসাইটের স্পিড খুব ভালো থাকে।
- নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি।
ক্লাউড হোস্টিং (Cloud Hosting)
ক্লাউড হোস্টিং হলো আধুনিক হোস্টিং সলিউশন। এখানে আপনার ওয়েবসাইট একটি সার্ভারের বদলে অনেকগুলো সার্ভারের সাথে যুক্ত থাকে। ফলে, কোনো একটি সার্ভার ডাউন (down) হয়ে গেলেও আপনার ওয়েবসাইটের কোনো সমস্যা হবে না। ক্লাউড হোস্টিং অনেকটা বিদ্যুতের গ্রিডের মতো, যেখানে অনেকগুলো পাওয়ার স্টেশন একসাথে যুক্ত থাকে।
ক্লাউড হোস্টিং এর সুবিধা :
- ওয়েবসাইট সবসময় অনলাইন থাকে।
- ট্র্যাফিক বাড়লে অটোমেটিকভাবে রিসোর্স (resource) বাড়তে থাকে।
- খরচ প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়ে কমে।
বন্ধুরা তোমার যদি কোন ইকমার্স ওয়েবসাইট অথবা নিউজ ওয়েবসাইট থাকে । তাহলে ক্লাউড হোস্টিং তোমার জন্য একটি বেস্ট অপশন হতে পারে।
আরো পড়ুন : বাংলাদেশী সেরা ৫ টি হোস্টিং কোম্পানি
DMCA হোস্টিং কি?
বন্ধুরা DMCA হোস্টিং হলো এমন একটি হোস্টিং পরিষেবা, যা ডিজিটাল মিলেনিয়াম কপিরাইট অ্যাক্ট (Digital Millennium Copyright Act) মেনে চলে। এই হোস্টিং ব্যবহারকারীদের কপিরাইটযুক্ত সামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইনি সুরক্ষা প্রদান করে। DMCA মূলত একটি মার্কিন আইন, যা অনলাইন কপিরাইট লঙ্ঘন থেকে মুক্তি দেয়।
DMCA হোস্টিং এর সুবিধা:
- কপিরাইট লঙ্ঘন সংক্রান্ত আইনি জটিলতা থেকে মুক্তি।
- ওয়েবসাইটের কনটেন্ট (content) সুরক্ষিত রাখার সুযোগ।
- বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি, কারণ এটি কপিরাইট আইন মেনে চলে।
হোস্টিং কেনার আগে কী কী দেখতে হয়?
সঠিক হোস্টিং বাছাই করাটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার ওয়েবসাইটের ভবিষ্যৎ এর উপর অনেকখানি নির্ভর করে। তাই, কেনার আগে কিছু জিনিস অবশ্যই দেখে নিতে হবে:
- সার্ভারের আপটাইম (Server Uptime) : আপটাইম মানে হলো আপনার ওয়েবসাইট কতক্ষণ ধরে অনলাইনে থাকে। ভালো হোস্টিং কোম্পানির আপটাইম সাধারণত ৯৯.৯% এর বেশি হয়।
- স্পিড (Speed) : ওয়েবসাইটের স্পিড খুব জরুরি। ভিজিটররা দ্রুত লোডিং ওয়েবসাইট পছন্দ করে। তাই, যে হোস্টিং সার্ভিসের স্পিড ভালো, সেটি বাছুন।
- স্টোরেজ ও ব্যান্ডউইথ: আপনার ওয়েবসাইটের ফাইল রাখার জন্য পর্যাপ্ত স্টোরেজ দরকার। আর ভিজিটরদের ডেটা ট্রান্সফার করার জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট ব্যান্ডউইথ। আপনার ওয়েবসাইটের প্রয়োজন অনুযায়ী স্টোরেজ ও ব্যান্ডউইথ বেছে নিন।
- সিকিউরিটি (Security) : ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। হোস্টিং কোম্পানি কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিচ্ছে, তা ভালোভাবে জেনে নিন।
- দাম: সবশেষে, দামের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। আপনার বাজেট অনুযায়ী সেরা হোস্টিং সার্ভিসটি খুঁজে বের করুন।
বন্ধুরা হোস্টিং কেনার পূর্বে এইসব বিষয় গুলো অবশ্যই তোমাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। তোমার বাজেট এ এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ কথা
হোস্টিং আপনার ওয়েবসাইটের অনলাইন ঠিকানা। তাই, একটু সময় নিয়ে ভালোভাবে রিসার্চ (research) করে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য সেরা হোস্টিংটি বেছে নিন। আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি আপনাকে হোস্টিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সাহায্য করেছে। আপনার যদি আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
Leave a Reply