Press ESC to close

RochonaRochona রচনা পড়িতে তোমাদের স্বাগতম

জাবেদা কত প্রকার ও কি কি ?

জাবেদার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Journal । সাধারণত প্রতিষ্ঠানে সংগঠিত বিভিন্ন হিসাব যে বইলে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে জাবেদা বলা হয়।

বন্ধুরা হিসাব বিজ্ঞান এ পটু হবার জন্য তোমাকে অবশ্যই জাবেদার উপর নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে। আজকে আমরা জাবেদা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আজকের এই আর্টিকেল টি আমরা জানবো , জাবেদা কি ? জাবেদা কত প্রকার ও তাদের সংঙ্গা । এডমিশন টেস্ট এর শিক্ষার্থী হয়ে থাকলে তোমার জন্য এই আর্টিকেলটি বেশ উপকারি হতে পারে।

জাবেদা কাকে বলে ?

বন্ধুরা আমরা যখন প্রথমেই জাবেদা করতে যাই , তখন একটা সাধারণ প্রশ্ন আমাদের সবার ই মাথায় আসে। তাহলো , জাবেদা কাকে বলে? জাবেদা হলো হিসাব রাখার প্রথম ধাপ। মনে করুন, আপনি একটি দোকান খুলেছেন। দোকানে প্রতিদিন অনেক লেনদেন হয়, যেমন – মাল কেনা, বিক্রি করা, খরচ দেওয়া ইত্যাদি। এই সব লেনদেন তারিখের ক্রমানুসারে প্রথমে যেখানে লেখা হয়, সেটাই জাবেদা।

জাবেদাকে হিসাবের প্রাথমিক বইও বলা হয়। কারণ, কোনো লেনদেন ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে জাবেদায় লেখা হয়। এরপর সেই তথ্য হিসাবের অন্যান্য খাতায় (যেমন – Ledger বা খতিয়ান) স্থানান্তর করা হয়।

জাবেদার প্রয়োজনিয়তা

জাবেদা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, তা কয়েকটি পয়েন্টে আলোচনা করা হলো:

  • লেনদেনের তারিখ অনুযায়ী হিসাব: জাবেদা লেনদেনগুলোকে তারিখের ক্রমানুসারে সাজিয়ে রাখে। ফলে, কোনো নির্দিষ্ট তারিখের হিসাব খুঁজে বের করা সহজ হয়।
  • ভুলের সম্ভাবনা কম: জাবেদায় প্রতিটি লেনদেন বিস্তারিতভাবে লেখা হয়। এতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
  • হিসাবের নির্ভুলতা: জাবেদা হিসাবের নির্ভুলতা নিশ্চিত করে। কারণ, এখানে প্রতিটি Debit (খরচ) এবং Credit (আয়) আলাদাভাবে লেখা হয়।
  • আইনি প্রমাণ: জাবেদা একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি দলিল হিসেবেও কাজ করে। কোনো dispute হলে, জাবেদা প্রমাণ হিসেবে দেখানো যেতে পারে।

বন্ধুরা জাবেদা শেখার পূর্বে জাবেদা কেন আমাদের শেখা প্রয়োজন , তা জানা দরকার। আশা করি তোমরা জাবেদার প্রয়োজনিয়া ইতিমধ্যে জেনে গেছো।

জাবেদা কত প্রকার ?

জাবেদা সাধারণত দুই প্রকার । যথা : সাধারণ জাবেদা ও বিশেষ জাবেদা। তো বন্ধুরা চলো এবার আমরা এই জাবেদা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি।

বিশেষ জাবেদা

সাধারণত যেসকল লেনদেন ব্যবসায় নিয়মিত হয়ে থাকে , যেমন : পন্য ক্রয় / বিক্রয় , নগদ অর্থের আদান – প্রদান ইত্যাদি লেনদেন গুলো কে আলাদা ভাবে যে জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে বিশেষ জাবেদা বলে। বড় ব্যবসার জন্য এটি খুব দরকারি। কারণ, এতে কাজ দ্রুত এবং সহজে করা যায়।

বিশেষ জাবেদাগুলো হলো: (Types of Special Journal)

  1. ক্রয় জাবেদা (Purchase Journal)
  2. বিক্রয় জাবেদা (Sales Journal)
  3. ক্রয় ফেরত জাবেদা
  4. বিক্রয় ফেরত জাবেদা
  5. নগদ প্রাপ্তি জাবেদা (Cash Receipt Journal)
  6. নগদ প্রদান জাবেদা (Cash Payment Journal)

ক্রয় জাবেদা

সহজ ভাষায় যে বইতে সাধারণত ধারে ক্রয় অন্তর্ভুক্ত হয় , সেই বইকে ক্রয় জাবেদা বলে। তবে মাথায় রাখবে নগদে পন্য ক্রয় ও ধারে বা নগদে সম্পত্তি ক্রয় এখানে লিপিবদ্ধ হবে না।

বিক্রয় জাবেদা

ক্রয় জাবেদা যেমন শুধুমাত্র ধারে ক্রয় লিপিবদ্ধ হয় , ঠিক তেমনি বিক্রয় জাবেদায় ধারে বিক্রয় লিপিবদ্ধ হবে। কোন প্রকার নগদে পন্য বিক্রয় অথবা নগদে/ ধারে সম্পদ বিক্রয় বিক্রয় জাবেদায় আসবে না। অথাৎ শুধুমাত্র ধারে পন্য বিক্রয়ই বিক্রয় জাবেদায় আসবে।

ক্রয়ফেরত জাবেদা কি ?

সাধারণত ধারে কোন কিছু ক্রয় করার পর , কোন কারণে তা ফেরত পাঠালে তখন তা ক্রয়ফেরত জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়। ধরো ‍তুমি তোমার কারবারে বিক্রির জন্য ধারে ১০০ টি সার্ট কিনলে , কোন কারণে সেখান থেকে ১০ টি সার্ট ফেরত পাঠালে। এক্ষেত্রে ১০ টি সার্ট এর মূল্য তোমাকে ক্রয়ফেরত জাবেদায় দেখাতে হবে।

তবে তুমি যদি নগদে কোন প্রকার পন্য কিনে থাকো , তা পরবর্তীতে ফেরত পাঠাও তাহলে ক্রয়ফেরত জাবেদায় আসবে না। অথাৎ শুধুমাত্র ধারে ক্রয়কৃত পন্য ফেরত পাঠালেই তা ক্রয়ফেরত জাবেদায় আসবে।

বিক্রয়ফেরত জাবেদা

ধারে বিক্রিত পন্য ফেরত আসলে তখন তা বিক্রয়ফেরত জাবেদায় আসবে । তবে নগদে বিক্রিত পন্য ফেরত আসলে তা বিক্রয় ফেরত জাবেদায় আসবে না

নগদ প্রাপ্তি জাবেদা

সকল প্রকার নগদ প্রাপ্তি সংক্রান্ত লেনদেন নগদ প্রাপ্তি জাবেদায় আসবে। এক্ষেত্রে বকেয়া বা ধারে লেনদেন আসবে না। আমরা ইতেমধ্যেই জেনেছি ধারে পন্য ক্রয় – ক্রয় জাবেদায় আসবে।

বন্ধুরা এবার চলো জেনে নেওয়া যাক , কারবারে কোন কোন উৎস থেকে নগদ প্রাপ্তি আসে। সাধারণত পন্য বিক্রয় এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে নগদ অর্থ আসে , পাপ্য হিসাব থেকে নগদ আদায়। এছাড়াও মালিক কতৃক বিনিয়োগ , ঋণ গ্রহণ , লভ্যাংশ , সুদ আদায় , বাড়ি ভাড়া ইত্যাদি হতে নগদ অর্থ আসে। এছাড়া নগদ অর্থের সমতুল্য যেকোন লেনদেন নগত প্রাপ্তি জাবেদায় আসে।

নগদ প্রদান জাবেদা

সকল প্রকার নগদ প্রদান , নগদ প্রদান জাবেদায় আসবে। তবে কোন প্রকার বকেয়া বা ধারে লেনদেন এখানে আসবে না। সাধারণত নগদে প্রন্য ক্রয় , পাওনাদার কে প্রদান , প্রদেয় বিল ইত্যাদি হিসাব নগদ প্রদান জাবেদায় আসবে।

বন্ধুরা এতক্ষন আমরা আলোচনা করলাম বিশেষ জাবেদা নিয়ে । বিশেষ জাবেদা প্রধানত ৬ প্রকার। যা সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। চলো এবার আমরা সাধারণ জাবেদা নিয়ে আলোচনা করি।

সাধারণ জাবেদা

বন্ধুরা ব্যবসায় নগদ আদান প্রদান , ধারে ক্রয় বিক্রয় ছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রকার লেনদেন রয়েছে। সাধারণত যেসকল লেনদেন বিশেষ জাবেদায় লিপিবদ্ধ হয় না , সেগুলো সাধারণ জাবেদা বা প্রকৃত জাবেদায় আসবে। সাধারণ জাবেদা সাধারণত ৬ প্রকার।

১. প্রারম্ভিক জাবেদা : সাধারণত পূর্ববর্তী বছরের হিসাবকালর উদ্বত্তপত্রের হিসাব ‍গুলোকে পরবর্তী বছরের শুরুতে নিয়ে যে জাবেদা দাখিলা দেওয়া হয় তাকে প্রারম্ভিক জাবেদা বলে।

বিষয়টিকে একটু সহজ ভাবে বোঝা যাক , একটি প্রতিষ্ঠানের সাধারণত তিনটি প্রধান আর্থিক উপাদান হলো সম্পদ , দায় ও মালিকানাস্বত্ব । ২০২৫ সালে তোমার কোম্পানির আর্থিক অবস্থার বিরবণী তৈরির সময় তুমি তোমার ব্যবসায়ে সম্পদ , দায় ও মালিকানাস্বত্বের পরিমাণ নির্ণয় করলে।

২০২৬ সালে তুমি সাধারণত ২০২৫ সালের এই উদ্বত্ত গুলো ব্যবহার করেই নতুন বছরের হিসাব শুরু করবে। অথাৎ ২০২৫ সালে যে পরিমাণ উদ্বত্ত ছিলো এখন ২০২৬ সালের শুরুতে তা তোমার জন্য প্রারম্ভিক জের এর পরিণত হয়েছে।

২. সমাপনী জাবেদা : সাধারণত হিসাব কালের শেষ এর দিকে নামিক ও উত্তোল হিসাব বন্ধ করার জন্য যে জাবেদা দাখিলা দেওয়া হয় তাকে সমাপনী জাবেদা বলে।

নামিক হিসাব : সাধারণত আয় ও ব্যয় হিসাব কে নামিক হিসাব বলে।

৩.সমন্বয় জাবেদা : হিসাব কাল শেষে অগ্রিম ও বকেয়া আয় ব্যয় সমূহ সমন্বয় করার জন্য যে জাবেদা দাখিলা দেওয়া হয় তাকে সমন্বয় জাবেদা বলে।

৪. স্থানান্তর জাবেদা : এক হিসাবের জের অন্য হিসাবে স্থানান্তর করার জন্য স্থানান্তর জাবেদা দাখিলা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

৫. ভুল সংশোসধনী জাবেদা : সাধারণত হিসাবের ভুল সংশোধন এর জন্য যে জাবেদা দাখিলা দেওয়া হয়ে থাকে তাকে ভুল সংশোধনী জাবেদা বলে।

৬. বিপরীত জাবেদা : পূর্ববর্তী হিসাবকালের বকেয়া আয় ব্যয় সমূহের সমন্বয় জাবেদার বিপরীতে যে জাবেদা দাখিলা দেওয়া হয় তাকে বিপরীত জাবেদা বলে।

শেষ কথা

জাবেদা অথবা হিসাব বিজ্ঞান রিলেটেড যেকোন প্রশ্ন তোমাদের মনে থাকলে , কমেন্ট বক্সে এ জানাতে পারো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *